ভূমিকা
ভারতের মতো দেশে স্বাস্থ্য বীমা এখন বিলাসিতা নয়, বরং অত্যন্ত জরুরি। হাসপাতালের বিল, ওষুধ, টেস্টের খরচ দিন দিন বাড়ছে। তবুও অনেকেই ভাবেন, “আমার তো কিছু হবে না!” অথবা আবেগের বশে বীমা কিনে ফেলেন। পরে দেখা যায়, জরুরি সময়ে বীমা কোম্পানি দাবি মেটাচ্ছে না, বা পলিসিতে এমন শর্ত আছে যা আগে কেউ বুঝিয়ে বলেনি।
এই ব্লগে, আমরা সহজ বাংলায় বুঝবো কেন স্বাস্থ্য বীমা জরুরি এবং বীমা কেনার আগে কী কী দেখবেন। এই গাইড মেনে চললে, আপনি এমন একটি পলিসি পাবেন যা সত্যি সত্যি আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দেবে।
কেন স্বাস্থ্য বীমা ভারতের প্রতিটি মানুষের জন্য জরুরি?
- চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া: সাধারণ অস্ত্রোপচারের খরচ ১-২ লক্ষ টাকা। ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাকের মতো বড় অসুখের চিকিৎসায় খরচ ৫-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যায়।
- সরকারি হাসপাতালে ভিড়, বেসরকারিতে খরচ: সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পেতে গেলে লম্বা লাইন আর অপেক্ষা। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে খরচের বোঝা সামলানো মুশকিল।
- টাকার সুরক্ষা: বীমা থাকলে হাসপাতালের বিল, ওষুধ, টেস্টের খরচ বীমা কোম্পানি দেবে।
- ট্যাক্স বেনিফিট: স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের উপর ইনকাম ট্যাক্সে ছাড় পাবেন (সেকশন ৮০ডি)।

বীমা কেনার সময় যেসব ভুল এড়াবেন
১. আবেগ বা তাড়াহুড়ো করে বীমা কেনা
- অসুস্থ হওয়ার পর বা পরিচিত কারো অসুখ দেখে তাড়াহুড়ো করে বীমা কিনে ফেলেন। পরে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় কভারেজ নেই।
২. ফাইন প্রিন্ট না পড়া
- বীমা পলিসির শর্তাবলী পড়তে ভালো লাগে না, কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
৩. সব বীমা একই মনে করা
- প্রতিটি বীমা কোম্পানির পলিসি আলাদা। সস্তার পলিসি মানেই ভালো পলিসি নয়।
৪. শুধু অফিসের বীমার উপর ভরসা করা
- চাকরি চলে গেলে বা রিটায়ারমেন্টের পর সেই কভারেজ থাকবে না। ব্যক্তিগত বীমা আলাদা করে রাখুন।
বীমা কেনার আগে এই ৭টি বিষয় মাথায় রাখুন
- কভারেজের পরিমাণ ঠিক করুন: কলকাতা, দিল্লির মতো শহরে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকার কভারেজ নিন।
- ইন্ডিভিজুয়াল নাকি ফ্যামিলি ফ্লোটার: বয়স্ক বাবা-মায়ের জন্য ইন্ডিভিজুয়াল, স্বামী-স্ত্রী ও বাচ্চাদের জন্য ফ্যামিলি ফ্লোটার।
- লুকানো শর্তগুলো চিনে নিন: সাবলিমিট, রুম রেন্ট ক্যাপ, কো-পে শর্তগুলো বুঝে নিন।
- ওয়েটিং পিরিয়ড বুঝে নিন: প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজ এবং মাতৃত্বের কভারেজে ওয়েটিং পিরিয়ড থাকে।
- নেটওয়ার্ক হাসপাতাল চেক করুন: আপনার পছন্দের হাসপাতাল নেটওয়ার্কে আছে কিনা দেখুন।
- এক্সক্লুশন তালিকা পড়ুন: ডেন্টাল, কসমেটিক সার্জারি, বিপজ্জনক খেলাধুলার injury সাধারণত কভার হয় না।
- অতিরিক্ত সুবিধা খুঁজুন: নো ক্লেম বোনাস, রিস্টোরেশন বেনিফিট, ফ্রি হেলথ চেকআপ।
বীমা পলিসি বাছাইয়ের সহজ স্টেপ
- অনলাইনে তুলনা করুন: গুগলে অনুসন্ধান করে বিভিন্ন পলিসির প্রিমিয়াম ও কভারেজ তুলনা করুন।
- কাস্টমার রিভিউ পড়ুন: ক্লেম সেটেলমেন্ট, সার্ভিস সম্পর্কে অন্যদের অভিজ্ঞতা জানুন।
- এজেন্টকে জিজ্ঞাসা করুন: প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজের ওয়েটিং পিরিয়ড বা ক্যাশলেস সুবিধা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন।
- সস্তায় পিছপা হবেন না: কম প্রিমিয়ামের লোভে এমন পলিসি নেবেন না যেখানে কভারেজই কম।
চেকলিস্ট: বীমা কেনার আগে এই points গুলো টিক করে নিন
- আমার পরিবারের জন্য কভারেজের পরিমাণ ঠিক করেছি।
- ইন্ডিভিজুয়াল নাকি ফ্যামিলি ফ্লোটার-সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।
- সাবলিমিট, রুম রেন্ট ক্যাপ, কো-পে-এই শর্তগুলো চেক করেছি।
- ওয়েটিং পিরিয়ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আছে।
- পছন্দের হাসপাতাল নেটওয়ার্কে আছে কিনা দেখেছি।
- এক্সক্লুশন লিস্ট পড়েছি।
- নো ক্লেম বোনাস, রিস্টোরেশন বেনিফিটের মতো সুবিধা চেক করেছি।
উপসংহার
স্বাস্থ্য বীমা মানে শুধু টাকা বাঁচানো নয়, বরং পরিবারের সুস্থতা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একটু সময় নিয়ে রিসার্চ করুন, সঠিক পলিসি বেছে নিন, আর যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।
আরও জানতে চাইলে কমেন্টে জানান-আমরা সাহায্য করতে পেরে খুশি হব!